এম.এ মোমেনঃ
চলছে মাঘ মাস। হীম শীতের ঠান্ডা হাওয়া। শরীরটাকে নিমিষেই শীতল করে দিচ্ছে। শীতের এ সময়টাতে উষ্ণতা প্রয়োজন। তাই মেলায় ঘুরার পাশাপাশি ফ্যাশন ও ট্রেন্ড বজায় রেখে শীতের পোশাক কিনতে মেলায় এসেছি। কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার পল্লবী থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী নুসরাত জাহান। সঙ্গে এসেছেন তার মা আরজুদা বেগম। নুসরাত জাহান বলেন, হিম কুয়াশায় আর সন্ধ্যায় ঝির ঝির বাতাসে প্রচুর শীত হয়। তাই আমাদের মতো অনেকেই শীতবস্ত্র ক্রয় করছেন। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতেও ভিড়। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। তাতে ক্রেতা বিক্রেতা খুশি। তবে শীতবস্ত্রের মধ্যে কাশ্মিরী শাল বিক্রি হচ্ছে বেশি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শীতবস্ত্রেও ফ্যাশন চলছে। ফ্যাশন জুড়ে তরুণ তরুণীরা শীতের পোশাক ব্যবহার করছে। কেউ পায়ের কনভার্স পরছেন। কেউবা জিন্স ও ফুল স্লিপ টি-শার্ট, কেউবা ফুল স্লিভ পোলো শার্ট পরছেন। আবার কেউবা জ্যাকেট, কাশ্মিরী শাল, চাদর, মাফলার কিংবা হুডি ব্যবহার করছেন। হুডি টিনএজদের জনপ্রিয় একটি পোশাক। শুধু ছেলেরাই নয় মেয়েরাও হুডি পরতে পছন্দ করেন। হুডি, জিন্স, সালোয়ার-কামিজসহ যেকোন পোশাকের সঙ্গেই মানানসই হয়। পরতে ঝামেলা কম হওয়ায় অনেকেই তা ক্রয় করছেন। মেলার স্টলে হুডি বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
মেলার স্টলগুলোতে শাল, কাশ্মিরি শাল, হুডি, ডেনিম শার্ট, সোয়েটার, জ্যাকেট, শীতের টুপি, সোয়েট প্যান্ট, ব্লেজার, কোট, উইন্টার কলার স্কার্ফ, কেডস, টুইল প্যান্ট, জেন্টস কেজুয়াল শীতের টুপি, উলের শীতবস্ত্র, ফুলহাতা টি-শার্ট, ফুল হাতা পোলো শার্ট, হ্যাট ও ক্যাপ, ট্রাউজার, ট্রেন্ডি পোশাক বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
শীতের ফ্যাশনেবল পুরুষের পছন্দের জ্যাকেট মেলায় বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। ক্রেতারাও দাম কম পেয়ে তা ক্রয় করছেন। শীতের এ পোশাক বাইক চালকরাও ব্যবহার করছেন। সিন্থেটিক লেদার, ডেনিম ফ্লিচ ও পলিস্টারের জ্যাকেটকে রঙ বেরঙের স্টিকার, পকেট, প্রিন্ট যুক্ত করে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। ব্লেজারের কাপর, কাট-ছাট, বোতাম, রঙে এবারের মেলার স্টলে বৈচিত্রের ছোঁয়া লেগেছে। জিন্স, চামড়া ও সুতি কাপড়ের বাইরে মখমলের জ্যাকেট বা ওয়েস্ট কোটের চাহিদা রয়েছে প্রচুর।
নারীদের শীতনিবারণের অন্যতম পোশাক হলো শাল। শালের তালিকার শীর্ষে হলো কাশ্মিরী শাল। কাশ্মিরী বাহারি শালে নিজেকে জড়িয়ে শীতের উষ্ণতায় মেতে উঠেন নারী। সেকারণে মেলার কাশ্মিরী শালের স্টলে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। বিক্রি বেশি হওয়ায় বিক্রেতারাও ন্যায্য মূল্যে তা বিক্রি করছেন।
শো-রুমের বিক্রির অর্ধেক দামে মেলার স্টলে কোট, ব্লেজার ২ হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শো-রুমের চেয়ে মেলার স্টলে দাম কম হওয়ায় অনেকেই তা ক্রয় করছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। তাতে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই খুশি। বাচ্চাদের শীতবস্ত্রও বিক্রি হচ্ছে বিশেষ মূল্যছাড়ে।
শীতের পোশাকের পাশাপাশি মাফলার ও টুপির চাহিদা রয়েছে প্রচুর। অনেকেই টুপি মাফলার ও পোশাকের রঙ মিলিয়ে মানানসই ভাবে ব্যবহার করে থাকেন। হাড়কাঁপানো শীতে শীতবস্ত্র দু’টির চাহিদা রয়েছে প্রচুর।
মেলার স্টলে দৈর্ঘ্য ও স্ট্রাইপ সোয়েটারের চাহিদা বেশি। এটি স্কার্ফের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এছাড়া পশমি উলের ও স্ক্রুশ কাজের সোয়েটারের চাহিদাও কম নয়। কালো, সাদা, চাপা সাদা ছাই, ধূসর, হলদে সবুজ, লাল, গোলাপী, নীল রঙের শীতবস্ত্র এখানে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী বলেন, প্রাকৃতিক ও খোলামেলা পরিবেশে আয়োজন করায় এবারের বাণিজ্য মেলা জমজমাট হয়ে উঠছে। মেলায় পণ্যের দাম ন্যায্যমূল্য হওয়ায় বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। ক্রেতা বিক্রেতা খুশি। রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহরের ৪নং সেক্টরে বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর স্থায়ী প্যাভিলিয়নে বসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের গঙ্গনগর থেকে আসা গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, মেলার ঘুরতে এসেছি। দাম কম হওয়ায় শীতবস্ত্র ক্রয় করেছি। গুণগত মানের উপর নির্ভর করে ৮শ’ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় কাশ্মিরী শাল মেলার স্টলে বিক্রি হচ্ছে।
নরসিংদীর পাটেরকান্দা এলাকা থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, শো-রুমের অর্ধেক দাম পেয়ে ২ হাজার ২শ’ টাকায় একটি ব্লেজার ক্রয় করেছি। ছোট বড় সব সাইজের একই দাম। স্টলে বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
আশিক ফ্যাশনের মালিক আব্দুল লতিফ বলেন, গোল গলা, ভি-গলা, চিকন কলারের সোয়েটারে রয়েছে নানা ডিজাইন। মেয়েদের উলের তৈরি কার্ডিগানেরও চাহিদা রয়েছে প্রচুর।
টপ সেভেনের মালিক আক্কাছ আলী বলেন, মাঘের শীতে বাঘ কাঁপছে। এই প্রবাদ যেন সত্যি হতে চলেছে। গত কয়েকদিন ধরে শীত বাড়ছে। শীত নিবারণ করতে মানুষ শীত বস্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বাণিজ্য মেলায় শীতবস্ত্রের বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। দাম কম হওয়ায়তে ক্রেতারাও তা ক্রয় করছেন। আমরাও লাভবান হচ্ছি।
কাশ্মিরী শালের দোকান হ্যারিটেজ কোম্পানি লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি রিপন চন্দ্র বণিক বলেন, দাম কম ও ফ্যাশনেবল হওয়ায় বাঙালি নারীরা কাশ্মিরী শালের উপর নির্ভরশীল। মেলায় কালারফুল কাশ্মিরী শাল বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
কাশ্মিরী শালের দোকান টেনশন ফ্রি শপের মালিক আহমেদ সাকিব বলেন, শীত নিবারণে ভারতের কাশ্মিরী শালের বিকল্প নেই। ফ্যাশনেবল হওয়ায় কাশ্মিরী শালের চাহিদা প্রচুর। মেলায় বিক্রিও হচ্ছে আশাতীত।